বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। পাকিস্তান, বাংলাদেশ, কাশ্মীর এবং ভারতে থাকা আমার অত্যন্ত প্রিয় মুসলমান ভাইয়েরা, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

মুসলিম উম্মত আজ রক্তাক্ত, ক্ষতবিক্ষত এবং প্রত্যেক ক্ষত আজ আগের থেকে বেশি গভীর, মিয়ানমারের মুসলমানদের উপর ভয়ানক নৃশংসতার খবর আপনাদের কাছেও পৌঁছে যাচ্ছে - অসংখ্য মুসলমানকে জবাই করা হয়েছে, জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, লাখ লাখ মুসলমানকে ঘর থেকে বের করে সমুদ্রে ফেলে দিয়ে তাদের ঘরবাড়ি, জমিজমা আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আবার এটা কোন প্রথম ঘটনাও নয়, বিগত কয়েক বছর ধরে দুনিয়া নীরবে এই নৃশংসতা দেখে যাচ্ছে। এই মুসলমানদের অপরাধ কি? তাদের অপরাধ শুধু এটাই যে তারা 4২ 1 পড়ে এবং এমন উম্মতের সাথে তাদের সম্পর্ক যেই উম্মতের সাথে আমি এবং আপনিও নিজেদেরকে সম্পর্কিত করি ...

আমার প্রিয় ভাইয়েরা,

মিয়ানমার এবং কাশ্মীরসহ দুনিয়াভর মুসলমানদের উপর ধেয়ে আসা এই নৃশংসতা আমাকে এবং আপনাদেরকে উদ্দেশ্য করে, এই ঘটনাগুলো বিশ্ব বিবেকের নামে বিবেকশুণ্য শয়তানকে উদ্দেশ্য করে নয়, এই সব শক্তি তো নিজেরাই এই নৃশংসতায় সমানভাবে অংশীদার; এটা আল্লাহর আদেশে প্রত্যেক ব্যক্তিকে ঝাঁকি দেওয়া এবং তার উপর প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত করার জন্য যে তাওহীদের কালেমা পড়ে। আমাদের প্রত্যেককে আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে, আমরা চাই আর না চাই, প্রস্তুতি নেই অথবা না নেই, শুধু মৃত্যবরণ করা বাকি, প্রত্যেককে আল্লাহর সামনে দাঁড় করানো হবে, এবং তখন মিডিয়ার এই রিপোর্ট, টিভি চ্যানেলগুলোর এই দৃশ্য, ইন্টারনেটের এই পোর্টালগুলো এবং খবরের শিরোনামগ্ডলো ... এসবগুলো সাক্ষী হবে, এগুলো সাক্ষী দেবে যে তোমাদের কান পর্যন্ত এই খবরগুলো পৌঁছে গিয়েছিল, চোখগ্ুলো এইসব দৃশ্যগুলো দেখেছিল, এরপর তোমরা কি করেছিল? তোমাদের যে দায়িত্ব দিয়ে আল্লাহ সৃষ্টি করেছিল, সেই দায়িত্বগুলো কি পূরণ করেছিলে নাকি স্বার্থপর এবং দুনিয়ার দাস হয়ে নিজের দুনিয়াতেই মগ্ন থেকেছ।

আমার ভাইয়েরা,

একটু চিন্তা করুন, দুনিয়ার অন্য কোন জাতি, কুফরি বিশ্বের অন্য কোন অংশে কাশ্মীর, মিয়ানমার এবং ফিলিস্তিনের মত কোন ক্ষত নেই; ইসলামী তু্কিস্তান (যা চীন দখল করে রেখেছে এবং জিঞ্জিয়ান নাম দিয়ে রেখেছে), একইভাবে আফগানিস্তান, চেচনিয়া, আলেপ্পো এবং ফাল্লুজার মত ক্ষত শুধু মুসলিম উম্মতের গায়ের উপরেই কেন? দুনিয়ার সব জাতি যেভাবে চাচ্ছে জীবনযাপন করছে, আমাদের এই দ্বীনই কেন শোষিত এবং এই দ্বীনের অনুসারীরা এতটা মাজলুম কেন? এর কারণ কি? আল্লাহর কিতাব এবং রাসূলুল্লাহ (৬) এর হাদিস অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে এই কারণ বর্ণনা করেছে? দুনিয়ার প্রতি ভালবাসা, আল্লাহর ইবাদত ছেড়ে দুনিয়ার মোহে পড়ে যাওয়া এর প্রধাণ কারণ। আবার দুনিয়ার এই উপাসনার বাহ্যিক প্রতিফলন - দুনিয়াদার হওয়ার পরিষ্কার ফলাফল - আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকে ছেড়ে দেওয়া আমার প্রিয় ভাইয়েরা, এই কারণকে যদি চোখ বন্ধ করে আমরা গ্রহণ না করি এবং এর সংশোধন আমরা না করি, বরং এর পরিবর্তে অন্য কিছু কারণ বলায় আমরা ব্যস্ত থাকি, তাহলে এটা নিজেকে ধোঁকা দেওয়া এবং বাস্তবতা থেকে পালানো হবে ... আর এর শাস্তি হল আল্লাহর পক্ষ থেকে আযাব। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত কুরআন মাজিদে বলেন যে, তোমাদের কাছে যদি মা, বাবা, স্ত্রী, সন্তান ঘরবাড়ি আল্লাহ, তাঁর রাসুল এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের থেকে বেশি পছন্দনীয় হয়, তাহলে আল্লাহর পাকড়াও এর অপেক্ষা কর

0011 এ| 011১০) 5৩ ৮৯৮ তাহলে আল্লাহ্‌র আযাবের আদেশের অপেক্ষা কর; আল্লাহ জালেমদের ভালবাসেন না।

রাসূলুল্লাহ (৬) এর বাণীঃ (২5815505319) যখন তোমরা সুদী ব্যবসা করতে থাকবে, (১11 ০১14১59) গরুর লেজ আঁকড়ে থাকবে, (6:091855) এবং ফসলের ক্ষেত নিয়ে খুশি থাকবে অর্থাৎ দুনিয়াদার হয়ে যাবে (55204455) এবং

1

জিহাদ ছেড়ে দিবে, (3১7421541৮০) আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর অপমান চাপিয়ে দিবেন, (11৯৯১ 42২ ১4১) এই অপমান লাঞ্ছনা ততক্ষণ পর্যন্ত থাকবে যতক্ষণ তোমরা তোমাদের দ্বীনে ফিরে না আস। অন্য এক হাদিসে রাসূল (ঞ) বলেনঃ (৪ | 24। 41351541425 133 ১17০। 4৪৯) তোমাদের উপর সারা বিশ্বের কাফেররা ঝাঁপিয়ে পড়বে, এমনভাবে ঝাঁপিয়ে পড়বে যেভাবে ক্ষুধার্তরা খাওয়ার জন্য দস্তরখানের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। জিজ্ঞেস করা হলঃ (559 ১০ 5 ১৯) সময় কি আমাদের সংখ্যা কম হবে? তিনি জবাব দিলেনঃ (৫45১০ 39১4০ ৬৪ 201 92954: 5856 86517464554 2৯ 95911142518 $ 201 ০555491445 &541) তোমাদের সংখ্যা অনেক বেশি হবে, কিন্তু তোমাদের অবস্থা হবে বন্যার পানির ফেনার মত, তোমাদের কোন মূল্যই থাকবেনা আল্লাহ তাআলা শক্রদের অন্তর থেকে তোমাদের ভয়কে উঠিয়ে নিবেন এবং তোমাদের অন্তরে “ওহান' ঢেলে দিবেন। জিজ্ঞেস করা হল “ওহান' কি? তিনি বললেনঃ (581 ৫5149 5351 ১) দুনিয়ার প্রতি ভালবাসা এবং মৃত্যুর প্রতি ঘৃণা!

আজ ইসলাম এবং ইসলামের অনুসারীদের এই বিজিত অবস্থায় আমাদের শরীয়তী দায়িত্ব কি? এর বিষয়ে তো প্রথমে কথাই বলা যায়না; দুনিয়া এবং এর গোলকধাঁধায় ব্যস্তদের সময় কোথাই যে এই বিষয়ে চিন্তা করা যাবে? স্বার্থপরতা এবং দুনিয়ার মোহ যে তাদের অন্তর বিচারবুদ্ধিকে অন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু যদি এই বিষয়গুলোকে সময় নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়, অন্তর্দৃষ্টি দেওয়া হয়, তাহলে এসব বিশ্লেষণ, অন্তর্দৃষ্টি প্রস্তাব এমন পথই দেবে যাতে দুনিয়ার মোহ এবং মৃত্যু থেকে পালানোর ব্যাপারটা সবসময় চোখে পড়বে ... ব্যতিক্রম শুধু সেই যার উপর আল্লাহ রহম করেন, আল্লাহ আমাদের সবার উপর রহম করুন। আমাদের অবস্থা তো এই যে আমরা চাই যে উম্মতের এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাক, ইসলাম বিজয়ী এবং কুফর পরাজিত হয়ে যাক। কিন্তু এতে আমাদের জান এবং মাল কুরবানি না হোক; সন্তানাদি এবং দেশ ত্যাগ করা তো অনেক দূরের কথা, দৈনন্দিন জীবনে সামান্য বাধাবিপত্তিও আমরা সহ্য করতে পারিনা। আর এই কারণেই এরপর গণতান্ত্রিক খেল-তামাসা, দ্বীনের মূলনীতির বিষয়ে সমঝোতা করা এবং বিশ্ব বিবেকের নামে কুফর বিশ্বের কাছে নিরাপত্তা প্রার্থনা করার মত ভ্রান্ত পথে চলাকেই আমরা এই সমস্যার সমাধান বলে থাকি। নিজেকে ধোঁকা দেওয়া এবং চোখ বন্ধ করার রাস্তা শুধু একটা নয়, পরিবর্তনশীল রাস্তাগুলোর প্রত্যেকটিতে ভিন্ন ভিন্ন কথার দিকে দাওয়াত দেওয়া হয়, কিন্তু যদি মনোযোগ দিয়ে দেখা হয় তাহলে বোঝা যাবে এগুলোর মাধ্যমে আমরা সব অপমান লাঞ্না থেকে মুক্তির রাস্তা - জিহাদ কিতালের মহান ইবাদত - থেকে আমরা পালাচ্ছি; সেই ইবাদত থেকে পালাচ্ছি যা আমাদের উপর আল্লাহ ফরয করেছেন (0580 15215554)1 এটা বাস্তবতা যে, জিহাদেই আল্লাহ দ্বীনের প্রাণ রক্ষাকবচ, উম্মতের জীবন, সম্মান এবং দুনিয়াজুড়ে মাজলুমদের সাহায্য রেখেছেন। এটাই সেই ইবাদত, জিহাদ, কুরআনের শত শত আয়াত এবং রাসূলুল্লাহ (৬) এর পুরো জীবন যে ইবাদতের আবশ্যকতা এবং গুরুত্ব বলে থাকে ...

দুনিয়াজুড়ে মাজলুম মুসলমানদের সাহায্য এবং আল্লাহর গযব এবং অসন্তুষ্টি থেকে বাঁচার একটি রাস্তা, এই রাস্তা সুস্পষ্ট, সোজা এবং পরিষ্কার, এটা আল্লাহর সামনে নত হওয়ার রাস্তা, তা হল দুনিয়ার উপাসনা ছেড়ে খাঁটি আল্লাহর ইবাদত করা এবং জীবনের সব ব্যাপারে আল্লাহর শরীয়তের উপর আমল করা। এরপর এই শরীয়তের চাহিদা হল জিহাদের ময়দানে নামা এবং জিহাদের কাফেলার সাথে যুক্ত হওয়া; এমন কাফেলার সাথে যুক্ত হওয়া যা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকে কাফেরদের গোলাম সেনাবাহিনী এবং সরকারের অনুমতির সাথে শর্তযুক্ত করেনা এমন মুজাহিদদের সাহায্য-সহযোগিতা করাকে আমরা যেন আমাদের উপর আবশ্যক মনে করি যাদের সাহায্য করা হবে মাজলুমদের সাহায্য করা; আল্লাহর শরীয়ত প্রতিষ্ঠা এবং এই শরীয়তের অনুসরণকে আমরা যেন নিজেদের জিহাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য মনে করি। আমরা দাওয়াত জিহাদের এই নবুওয়্যাতি মানহাযকে আঁকড়ে ধরে যদি শরীয়ত বহির্ভূত সব রাস্তাকে বিদায় জানাই, তাহলে ইনশাআল্লাহ আল্লাহর সাহায্য দুরে না।

এখানে আমি এটাও বলতে চাই যে, আমি এবং আপনি ফরয আদায় করার ব্যাপারে দায়বদ্ধ আর বিজয় হল ফলাফল যা আল্লাহর হাতে, আমরা যদি ফরয আদায়কারী হয়ে যাই, তাহলে এই রাস্তা লম্বা হোক অথবা সংক্ষিপ্ত হোক, প্রত্যেক পদক্ষেপই গন্তব্য এবং প্রত্যেক মোড়ে আছে সফলতা, ইনশাআল্লাহ। জিহাদের এই রাস্তায় ব্যক্তিগত সফলতা বিশুদ্ধ নিয়ত এবং

2]

শরীয়তের অনুসরণের সাথে শর্তযুক্ত; আর সমষ্টিগতভাবে জাতি বা উম্মত হিসেবে আমরা যদি দাওয়াত এবং জিহাদের সাথে যদি যুক্ত হতে পারি, তাহলে উপমহাদেশ কেন পুরো দুনিয়াতে ইনশাআল্লাহ ন্যায়পরায়ণতার এই বরকতময় ভোরের উদয়ে মোটেও দেরি হবেনা।

মিয়ানমার এবং দুনিয়ার সব মাজলুমদের একজন সাধারণ মুসলমান কি ধরণের সাহায্য করতে পারবে? এই সাহায্যের কি কি ধরণ হতে পারে, এর উপরে সামনের সাক্ষাতে কথা হবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আপনাদের সবাইকে উত্তম প্রতিদান দিন .. আল্লাহ তাআলা আমাদের এই মাজলুম উম্মতকে সাহায্য করুন এবং আল্লাহ আমাদেরকে সেই রাস্তায় যেন পরিচালিত করেন যেই রাস্তায় আল্লাহর সন্তুষ্টি আছে এবং যাতে মাজলুমদের সাহায্য করাও হয় ...

আর আমাদের সর্বশেষ কথা হল সমস্ত প্রশংসা সমগ্র বিশ্বের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য।

3|